শরীয়তের উৎস


শরীয়তের উৎস:

আমরা জানি ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্মই নয়। এটি হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটা আমাদের সর্বজনীন ও সর্বকালীন বিধি-বিধানের সমষ্টি।  বিষয়বস্তু গুলোর পাশাপাশি মানব জীবনে আচরণগত সমস্ত দিকও ইসলামে আলোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কল্যাণের জন্য নানা বিধি-বিধান ও আচার-আচরণগত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরা জানি মহান আল্লাহতালা এবং তার নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সকল কাজে তাদের অনুগত্য করা এবং তাদের বিধি বিধান এবং তাদের প্রতি ঈমান আনাকে শরীয়তের উৎস বলে মনে করা হয়। কারণ এদের পরিপূর্ণ অনুগত অনুসরণের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক সফলতা লাভ করা যায়। এখন আমরা জানব ইসলামী শরীয়তের পরিচয় ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পাশাপাশি শরীয়তের উৎসগুলো সম্পর্কের সংক্ষিপ্ত ধারণা লাভ করুন।


এখন আমরা ইসলামী শরীয়তের পরিচয় এর গুরুত্ব এবং শরীয়তের মূল উৎস গুলো সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা লাভ করব !

     পেজ সূচীপত্র



শরীয়তের পরিচয়ঃ

ফরিয়াদ শব্দটি হল একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ রাস্তা বা পথ এটি জীবন পদ্ধতি এবং আইন কানুন বিধি-বিধান অর্থেও ব্যবহৃত হয় ব্যাপকভাবে। ব্যাপক অর্থে শরীয়ত হলো কষ্ট পাওয়া যায় আমরা অনুসরণ করলে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। ইসলামী পরিভাষায় আমরা ইসলামের কার্যনীতি বা জীবন পদ্ধতিকে শরীয়ত বলে থাকে। অন্য কথায় আমরা জানি ইসলামী আইন কানুন বা বিধি-বিধানকে একত্রে শরীয়ত বলা হয় এবং এর ওপরে নিয়ম-কানুন নিয়ম কানুন মেনে চলাকে শরীয়ত বলে গণ্য করা হয়। আল্লাহতালা এবং তার নবী রাসুল সাঃ যেসব যেসব আদেশ ও নিষেধ পথ নির্দেশনা মানুষকে দিয়েছেন এবং তাদের জীবন পরিচালনার জন্য প্রদান করেছেন তাকেও শরীয়ত বলে।

 শরীয়ত সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন.......

আমি আপনাকে শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং আপনি তার অনুসরণ করুন ।আর আপনি অজ্ঞদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেন। (সূরাজাসিয়া আয়াত ১৮)

শরীয়তের বিষয়বস্তু  এবং পরিধিঃ

ইসলাম এবং মুসলিমদের জন্য শরীয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। শরীয়ত হল আমাদের মানবজাতির জন্য সার্বিক অপূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের সকল বিষয়ের বিধি-বিধান ও নির্দেশনা এতে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন।.....


         আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। এবং তোমাদের জন্য  ইসলামকে দিন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা আল মাঈদা আয়াত তিন)

এ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে ইসলামী শরীয়তের বিষয়বস্তু ও পরিধি অত্যন্ত ব্যাপকভাবে আমাদের ওপর নির্দিষ্ট হয়েছেন । আমরা জানি মুসলিম শরীয়তের বিষয়বস্তুকে সাধারণত তিন ভাগে আমরা ভাগ করেছি।

১.। আকীদা বা বিশ্বাসগত বিধি-বিধান
২. নৈতিকতা ও চরিত্র সংক্রান্ত রীতিনীতি
৩. বাস্তব কার্যকর্ম সংক্রান্ত নিয়ম কানুন মেনে চলা


শরীয়তের গুরুত্বঃ 

ইসলামে মানব জীবনের শরীয়তের গুরুত্ব অপরিসীম যা বলে বোঝানো যাবে না। শরীয়ত হল মহান আল্লাহতালা ওদের রাসূলের প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান মেনে চলা। আমরা যদি শরীয়ত মেনে চলি আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূল খুবই খুশি হন । আর যদি শরীয়ত মেনে না চলি আল্লাহ তাআলা এবং নবী রাসুলের বিধি-বিধান না মেনে তাহলে আল্লাহতালা এবং তার নবী খুশি হন না। অন্যদিকে দেখা যায় আমাদের কিছু শরীয়ত অস্বীকার লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলে মুসলিম তাদের কখনো ঈমান থাকবে না পরিচয় দিলেও তাদের মধ্যে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি এরূপ করে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে আল্লাহ তা'আলা বলেন। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেছেন তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো না আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো তোমাদের যারা এরকম করে তাদের একমাত্র প্রতিফলন হল তোমাদের মধ্যে কখনো ঈমান ঠিক থাকবে . না।

শরীয়তের উৎস সমূহঃ

শরীয়ত হল ইসলামের জীবনী পদ্ধতি। ইসলামী নিয়মের জীবন ব্যবস্থা এবং জীবনকে পরিপূর্ণ পরিচালিত করাকে করে সফল হতে হবে। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের আদেশ নির্দেশ ও
 দিক নির্দেশনা সমষ্টি হল ইসলামের জীবন পদ্ধতি। শরীয়তের প্রধান উৎস দুটি হলো আল কুরআন ও  আল হাদিস বা   সুন্নাহ।

শরীয়তের প্রথম উৎসঃ আল -কোরআন

শরীয়তের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান উৎস হল আল কোরআন। ইসলামী শরীয়তের সকল বিধিবিধানের মূল উৎসই হল আল কোরআন। এর উপর ইসলামী শরীয়তের ভিত্তি ও কাঠামো প্রতিষ্ঠিত। আল কুরআন শরীয়তের অকাট্য ও প্রমাণ্য দলিল প্রয়োজনের সকল নীতি ও ইঙ্গিত আল কোরআনে বিদ্যমান।
আল্লাহ তাআলা বলেন........
আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ। {সূরা আন নাহল আয়াত 89)

আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কদরের রাতে গোটা কোরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ থেকে বাইতুল ইযাহ নামক স্থানে নাযিল করেন। বাইতুল ইযাহ হল প্রথম আসমানের একটি বিশেষ স্থান।  

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা গুহায়  ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে জিবরাঈল আঃ আল কুরআনের সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু সালামের নিকট অবতরণ করেন। এটাই ছিল দুনিয়াতে আল কোরআনের প্রথম নাযিলের ঘটনা। এরপর বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে মহানবী সাঃ এর প্রতি কোরান নাজিল হতে থাকে। বিভিন্নভাবে কোরআন নাজিল হতে হতে মহানবী সাল্লাহু সাল্লাম এর জীবনের মোট২৩ বছর সম্পূর্ণ কোরআন নাযিল হয় । এটি একসাথে নাযিল হয়নি অল্প অল্প করে প্রয়োজন অনুসারে নাজিল হতে থাকে । কখনো পাঁচ আয়াত কখনো দশ আয়াত কখনো আয়াতের অংশবিশেষ কখনো একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হতে থাকে । 

এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতালা বলেন......
আর আমি খন্ড খন্ড ভাবে কোরআন নাজিল করেছি। যাতে আপনি তা মানুষের নিকট অল্প অল্প করে পাঠ করতে পারেন। আর আমি তা আস্তে আস্তে নাযিল করতে থেকেছি।

আল কুরআনের সংরক্ষণ ও সংকলনঃ 

আল কোরআন হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব । কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমন করবেন এবং মানুষের সার্বিক জীবনধারণ কেমন হবে এবং তারা নিজেদের নির্দেশনা কেমন ভাবে মেনে চলবে তা এই আল কুরআনের বিদ্যমান রয়েছে। দিনে দিনে যত মানুষ জন্ম নিবে এবং তাদের এবং তারা ইসলামের কি কি দিক নির্দেশনা মেনে চলবে, ইসলামকে জীবনের সর্বোচ্চ হিসেবে মেনে নিবেকিভাবে তাদেরকে ত এ আল কোরআন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। তাই সকল মানব জাতির একটি নির্দেশনা হল হে আল কুরআন কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত সংরক্ষণ করার জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বলে গেছেন। আল্লাহ তাআলা নিজে আল কোরআন সংরক্ষণের ভার গ্রহন করেছেন। দুনিয়াতে এমন শক্তি নেই যে এই আল কুরআন মুছে ফেলতে পারবে।

আল-কোরআন সংরক্ষণ

কোরআন আরব দেশের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর নাযিল হয়। এ সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সাথে সাথে নাযিলকৃত আয়াত মুখস্ত করে নিতেন ।এরপর বারবার তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁ স্মৃতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করতেন। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজিলকৃত আয়াত মুখস্ত করা ও এবং দ্রুত পাঠ করার ব্যাকুলতা দেখে আল্লাহ তাআলা তাকে সান্তনা দেন।
আল-কুরআনের আয়াত নাযিল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখস্ত করার পর সাহাবীগণদের কেউ তা মুখস্ত করতে বলতেন। সাহাবীগণতাম মুখস্ত করতেন দিন রাত তেলাওয়াত করতেন নামাজে পাঠ করতেন এবং পরিবার পরিজন স্ত্রী সন্তান বন্ধু-বান্ধবদেরও মুখস্ত করাতেন ।গভীর রাতে তাদের ঘর থেকে কোরআন তেলাওয়াতের গুন গুন আওয়াজ শোনা যেত। অনেক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ির পাশে গিয়ে তেলায়াত শুনতেন। 
এভাবে মুখস্ত করার মাধ্যমে আল কুরআন সর্বপ্রথম সংরক্ষণ করা হয়। তৎকালীন আরবের স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই তীক্ষ্ণ। তারা কোন  জিনিস শিখলে তা আর কখনো ভুলে যেতে না । এ অসাধারণ স্মৃতিশক্তির কারণে পবিত্র কুরআন সহজে তাদের স্মৃতিতে সংরক্ষণ হয়ে থাকত।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এডভেঞ্চার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url