ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

আপনি কি ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে চাইছেন তাহলে এই লেখা আপনার জন্য একেবারেই উপযুক্ত। বর্তমান যুগে নিরাপদ ভাবে টাকা জমা রাখা ও হালাল উপায়ে মুনাফা পাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট অন্যতম সেরা মাধ্যম। এটি কেবল একটি ব্যাংক একাউন্ট নয় বরং শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত একটি আর্থিক সেবা। 

ইসলামী-ব্যাংক-একাউন্ট-খোলার-নিয়ম

যেখানে সুদের পরিবর্তে লাভ ভাগাভাগির মাধ্যমে গ্রাহকদের মুনাফা প্রদান করা হয়। ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খুললে আপনি পাবেন পাসবুক ডেবিট কার্ড মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা এবং সবচেয়ে বড় কথা আপনার সঞ্চয় থাকবে নিরাপদ বিশ্বস্ত ব্যবস্থাপনার অধীনে।

পেজ সূচিপত্রঃ ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলা খুবই সহজ এবং নির্ভরযোগ্য একটি প্রক্রিয়া। অনেকেই ধারণা করেন ব্যাংক মানে সুদের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক সেই ধারণা বদলে দিয়ে প্রমাণ করেছে যে ব্যাংকিং সেবা সরিয়া মোতাবেক সুদ মুক্তভাবে পরিচালিত হতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খোলার মাধ্যমে একজন গ্রাহক নিজের কষ্ট করে অর্জিত অর্থ নিরাপদ জমা রাখতে পারেন। আবার সেই অর্থ থেকে সরিয়া মোতাবেক মুনাফা ও অর্জন করতে পারেন। এটি শুধু একটি ব্যাংকিং সুবিধা নয় বরং একটি বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক আশ্রয়স্থল যেখানে ইসলামী নীতিমালা ও আধুনিক ব্যাংকিং সেবা সমন্বয় ঘটেছে।

ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই নিকটস্থ কোন শাখায় যেতে হয়। সেখানে গিয়ে ব্যাংক কর্মচারীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফর্ম নিতে হয় এবং ফর্ম টি সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়। ফরম পূরণের সময় জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম সনদ নিজের সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিলের কপি বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ হিসেবে এবং প্রয়োজনে একজন পরিচিত ব্যক্তির রেফারেন্স দিতে হয়। সব তথ্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একাউন্ট খোলার অনুমোদন দেয়। সাধারণত এক থেকে দুই দিনের মধ্যে একাউন্ট এখন সক্রিয় হয়ে যায় এবং গ্রাহক আনুষ্ঠানিকভাবে সেভিংস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার সুযোগ পান।
ইসলামী-ব্যাংক-সেভিংস-একাউন্ট-খোলার-নিয়ম
একাউ্নট চালু হওয়ার পর আপনি একটি পাসবুক পান যেখানে সব জমা উত্তোলন হিসাবে বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। চাইলে আপনি চেকবুকও সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে যার মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘরে বসেই লেনদেন করা যায়। এতে আমার আপনার ঝামেলা কমে যায় এবং আপনি যেকোনো সময় নিজের একাউন্টে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে। 

ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা প্রদানের নিয়ম। এখানে কোন সুদ নেই ব্যাংক গ্রাহকের জমা রাখা অর্থ শরিয়া সম্মত হালাল খাতে বিনিয়োগ করে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে জেলা বাসে তার একটি অংশ গ্রাহককে প্রদান করে। একটিকেই মুনাফা বলা হয়। এটি শুরু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ইসলামী শরীয়াহার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সাধারণ মাস শেষে অথবা নির্দিষ্ট সময় অন্তর গ্রাহক তার জমার উপর মুনাফা পান। এভাবে গ্রাহক নিজের অর্থ নিরাপদে জমা রাখার পাশাপাশি নিয়মিত হালাল আয়ের সুযোগ পান। 

সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলা শুধু একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা নয় বরং এটি এক ধরনের আস্থার প্রতীক। এখানে অর্থ থাকে সুরক্ষিত লেনদেন হয় সরিয়া মোতাবেক এবং গ্রাহক পান মুনাফার স্বচ্ছ সুবিধা। যারা সুদ মুক্ত ব্যাংকিং করছেন যারা ইসলামী শরীয়াহার মতো আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্ট নিঃসন্দের একটি আকৃষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য সমাধান। তাই ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখা উচিত। 

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য কি কি দরকার

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া খুব একটা জটিল নয়। তবে অনেকেই প্রথমবার ব্যাংকে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। কোন কাগজপত্র লাগবে কিভাবে ফরম পূরণ করতে হবে বা কি ধরনের তথ্য দিতে হবে তাই আগে থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য প্রস্তুত থাকলে একাউন্ট খোলার কাজ সহজ হয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
  1. প্রথমে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র এন আই ডি লাগবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিচয় পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও এটি বাধ্যতামূলক। তবে যাদের এখনও জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি হয়নি তারা চাইলে বৈধ পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে পারেন।
  2. এরপর প্রয়োজন হবে দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবিগুলো অবশ্যই নতুন হতে হবে এবং স্পষ্ট হতে হবে। পুরনো ছবি বা ঝাপসা ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না। এই ছবিগুলো আপনার অ্যাকাউন্ট ফাইল এর সংরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতে ব্যাংকের যে কোন কার্যক্রমে কাজে লাগবে।
  3. অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনার বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ ও জরুরী সাধারণত বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল পানির বিল অথবা যে কোন সরকারি সংস্থার দেওয়া বিলের কপি ব্যবহার করা হয়। এই নথি আপনার ঠিকানা সত্যতা যাচাই করার জন্য প্রয়োজন হয়।
  4. এছাড়া নমিনির তথ্য দিতে হবে। নমিনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আপনার অনুপস্থিতিতে বা দুর্ভাগ্যক্রমে মৃত্যুর পরে আপনার একাউন্টে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। সাধারণত নিজের পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে এই নমিনি করা হয় এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ছবি জমা দিতে হয়।
  5. অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক একজন রেফারেন্স চাইতে পারে রেফারেন্স সাধারণত সেই ব্যক্তি যিনি ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক। তার নাম অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং স্বাক্ষর রেফারেন্স হিসেবে দিতে হয়। এতে ব্যাংক নিশ্চিত হয় যে আপনি একজন পরিচিত গ্রাহকের মাধ্যমে এসেছেন।
  6. সবশেষে আপনাকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্মে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম ঠিকানা পেশা জন্ম তারিখ বৈবাহিক অবস্থা যোগাযোগের নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে দিতে হবে। কোন তথ্য যেন ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এই তথ্যগুলি ভবিষ্যতে আপনার ব্যাংকিং কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার হবে।
  7. সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার ফরম যাচাই বাছাই করবে এবং সাধারণত ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে একাউন্ট সংগৃহ করে দেবে। এরপর আপনি পাসবুক পাবেন চাইলে সেবক নিতে পারেন এবং ইসলামী ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমেও লেনদেন করতে পারবেন।
সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুব জটিল নয়। আগে থেকে যদি সবকিছু প্রস্তুত করে নিয়ে যান তবে একাউন্ট করার কাজে একেবারে ঝামেলা হলো দ্রুত সম্পন্ন হবে। আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম জানেন তাহলে আপনার জন্য একবারে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার উপকারিতা

ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলা মানে হচ্ছে আপনার কষ্ট করা টাকাকে এমন এক নিরাপদ স্থানে জমা রাখা যেখানে প্রতিটি লেনদেন ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এখানে সুদের কোন স্থান নেই। ইসলামী নীতির আলোকে হালাল উপায়ে অর্থ জমা রাখার এই ব্যবস্থা মুসলমানদের জন্য একদিকে যেমন মানসিক শান্তির কারণ তেমনি আর্থিক নিরাপত্তার ও নিশ্চয়তা রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনার টাকা শুধু আমানত হিসেবে নিরাপদ থাকবেনা বরং ব্যাংক সেই টাকাকে সরিয়া মোতাবেক অনুমোদিত বিভিন্ন ব্যবসা বিনিয়োগ খাতে ব্যবহার করবে। সেখান থেকে যে লাভ আসবে তার একটি অংশ আপনাকে প্রদান করবেন। যেটিকে বলা হয় মুনাফা। এটি কখনো সুদ নয় সুদের মতো হারাম কিছু এখানে নেই বরং হালাল মুনাফা পাওয়া নিশ্চয়তা রয়েছে। এতে করে আপনার আন্তিক প্রশান্তিও বজায় থাকবে।

আরেকটি বড় সুবিধা হল অর্থের নিরাপত্তা। ঘরে টাকা রাখলে সব সময় চুরি নষ্ট হওয়া বা দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু ব্যাংকে রাখলে সেই ভয় একেবারেই থাকে না। ব্যাংক আপনার টাকার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয় এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময় আপনি আপনার টাকা লেনদেন করতে পারেন। ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার পর আপনি পাসবুক পাবেন যাতে প্রতিটি জমা উত্তোলনের হিসাব থাকবে। চাইলে চেক বুক নিতে পারবেন যার মাধ্যমে সহজে বড় আঙ্কের টাকা লেনদেন করা যায়।

এ ছাড়া আধুনিক সুবিধা হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস ব্যবহার করে ঘরে বসে টাকা পাঠানো গ্রহণ করা বা অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করা সম্ভব। ফলে ব্যাংকে না গিয়েও আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো দ্রুত করা যায়। ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না স্বল্প টাকাতে এখানে একাউন্ট খোলা যায়। একবার অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রতি মাসে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপনার জমার ওপর মুনাফা জমা হয়। এতে আপনার টাকা শুধু নিরাপদেই থাকে না বরং বাড়তেও থাকে।

সবচেয়ে বড় কথা হল ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা গ্রাহকদের প্রতি খুবই সহযোগিতা পূর্ণ হিসেবে কাজ করে। যদি কিছু বুঝতে সমস্যা হয় বা কোন বিষয়ে সন্দেহ থাকে তারা ধৈর্য সহকারে সবকিছু বুঝিয়ে দেন এবং গ্রাহককে সঠিক পরামর্শ দেন। প্রথমবার ব্যাংক একাউন্ট খুলতে আসা গ্রাহকরাও কোন ঝামেলায় পড়েন না। সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট হলো এমন একটি সেবা যে আপনার অর্থকে  নিরাপত্তা বাড়ায় হালাল মুনাফা আর আপনাকে দেয় মানসিক প্রশান্তি। যারা সুদ মুক্ত এবং সরিয়াস সম্মতভাবে টাকা জমা রাখতে চান তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট নিঃসন্দেহে একটি সেরা সমাধান। তাই আপনাকে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সাধারণত ধারণা রাখতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার খরচ

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার সময় সাধারণত কোন আলাদা প্রিন্ট দিতে হয় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট খরচ এবং শর্ত থাকে যেগুলো প্রতিটি গ্রাহকের জানা জরুরী। কারণ এগুলো আগে থেকে না জানলে পরে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। ইসলামী ব্যাংক মূলত গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভেবে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।

প্রথমতঃ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য একটি ন্যূনতম টাকা জমা রাখতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার সময় নূন্যতম 500 টাকা জমা রাখা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট চালু করার জন্য গ্রাহককে এই অর্থ জমা দিতে হবে। এটি খরচ হিসেবে নয় বরং আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।

দ্বিতীয়তঃ চেকবক্স ফি সাধারণত প্রথমবার চেকবুক বিনামূল্যে প্রদান করা হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে নতুন চেক বুক নিতে হলে প্রতি পাতার জন্য ৫ টাকা করে ফি দিতে হয়। অর্থাৎ আপনার চাহিদা অনুযায়ী চেকবুক নিলে এর জন্য অতিরিক্ত খরচ প্রযোজ্য হবে।

তৃতীয়ঃ অ্যাকাউন্ট বন্ধের ফি যদি কোনো কারণে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে চান তাহলে নির্দিষ্ট একটি ফি প্রদান করতে হয়। সাধারণত ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা চার্জ নেওয়া হয়ে থাকে। এটি এককালীন ফি এবং শুধুমাত্র একাউন্ট বন্ধ করার সময় প্রযোজ্য।

চতুর্থঃ অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ব্যাংকগুলো সাধারণত একটি ন্যূনতম ব্যালেন্স বজায় রাখার শর্ত দেয়। উদাহরণস্বরূপ যদি একাউন্টে ১০ হাজার টাকা বা তার কম ব্যালেন্স থাকে তবে সাধারণত কোন চার্জ প্রযোজ্য হয় না। কিন্তু দশ হাজার এক টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যালেন্স থাকলে ব্যাংক বছর নির্দিষ্ট সময়ে 100 টাকা রক্ষণাবেক্ষণ ফি কেটে নিতে পারে। এই ফি আসলে ব্যাংকের সেবা প্রদান হিসেবে ধরা হয়।

এছাড়াও আরো কিছু অতিরিক্ত খরচ থাকতে পারে যেমন একাউন্টের স্টেটমেন্ট এর ইস্যু করতে চাইলে ব্যাংক সার্টিফিকেট নিতে চাইলে বা বিশেষ কোন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হলে আলাদা ফি দিতে হতে পারে। এসব খরচ নির্ভর করে ব্যাংকে নীতিমালা এবং সময়ের ওপর।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব খরচ এক একটি ব্যাংকে এক এক রকম হতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনও হতে পারে। তাই অ্যাকাউন্ট খোলার আগে সংশ্লিষ্ট ইসলামী ব্যাংকের শাখা গিয়ে বর্তমান নিয়ম-কানুন এবং ফ্রি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নেওয়া খুবই জরুরী। এতে আপনি অপ্রত্যাশিত কোন সমস্যায় পড়বেন না এবং একাউন্ত খোলার আগেভাগে আপনার পরিকল্পনা পরিষ্কার থাকবে। 

সব মিলিয়ে বলা যায় ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সেভিংস একাউন্ট খোলার খরচ খুব বেশি নয় বরং অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এটি অনেক সহজ এবং গ্রাহক বান্ধব। সামান্য কিছু শর্ত মেনে চললে আপনি হালাল উপায়ে নিরাপদে আপনার টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং একই সাথে মুনাফা উপভোগ করতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার যোগ্যতা

ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। এই যোগ্যতাগুলো মূলত ব্যাংকের নিরাপত্তা গ্রাহকের পরিচয় যাচাই এবং আইনি দায়েরবদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য রাখা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে শুধুমাত্র টাকা থাকলে একাউন্ট খোলা যায় কিন্তু আসলে বিষয়টি তেমন নয়। আপনার পরিচয় বয়স নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করে তবে অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়। তাই ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খুলতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে সেগুলো হলোঃ

  1. গ্রাহককে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাধারণ সেভিংস একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়। পুরুষ কিংবা মহিলা যে কেউ নাগরিক হলে সহজেই একাউন্ট খুলতে পারবেন।
  2. সেভিংস একাউন্ট খুলতে হলে বয়সের সীমা রয়েছে। সাধারণত একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহকের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। তবে ১৮ বছরের নিচে কোন ছেলে বা মেয়ে চাইলেই  অভিভাবকের মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবক তার দায়িত্ব নিয়ে শিশুর নামে একাউন্ট চালু করতে পারবেন। এটিকে সাধারণত মাইনর একাউন্ট বলা হয়।
  3. এরপর জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হয়। যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকলে তবে পাসপোর্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যাংকের জন্য গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।
  4. ছবি জমা দিতে হবে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কমপক্ষে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের পরিষ্কার ছবি লাগবে। ছবিটি অবশ্যই সাম্প্রতিক এবং স্পষ্ট হতে হবে। এটি ব্যাংকের রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতে কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।
  5. বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ দেখাতে হবে। এর জন্য সাধারণত বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল অথবা পানির বিলের কাগজ ব্যবহার করা হয়। এতে ব্যাংক নিশ্চিত হয় যে গ্রাহক কোথায় বসবাস করছেন।
  6. নমনী নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক। একাউন্টের মালিক যদি কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকেন বা মৃত্যুবরণ করেন সে ক্ষেত্রে টাকা উত্তোলনের অধিকার থাকবে সেই নমনীর। এজন্য নমিনির ছবি ও পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
  7. একাউন্ট খোলার সময় একটি প্রাথমিক জমা রাখতে হবে এটি আসলে অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করার জন্য বাধ্যতামূলক। সাধারণত ন্যূনতম কয়েকশত টাকা জমা দিয়ে সেভিংস একাউন্ট খোলা যায়।
  8. একবার একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে একাউন্ট খুলতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তির সম্মতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। যত অ্যাকাউন্ট সাধারণত পরিবার বা ব্যবসায়ীকংসীদের মধ্যে বেশি প্রচলিত।
সবশেষে বলা যায় ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম উপরোক্ত যোগ্যতা গুলো পূরণ করলে ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট করা সম্ভব হয়। তবে মনে রাখতে হবে ব্যাংকের নীতিমালা সময় সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই অ্যাকাউন্ট খোলার আগে নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের শাখা যোগাযোগ করে সর্বশেষ নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। এতে করে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হবে অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় ঝামেলাও এড়ানো যাবে।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট মুনাফা কিভাবে পাওয়া যায়

ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে কোন ধরনের সুদ নেই। অর্থাৎ আপনি ব্যাংকে টাকা রাখলেও কখনোই সুদের মতো হারাম কিছু পাবেন না। পরিবর্তে যা পাবেন সেটি হল মুনাফা যা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী সম্পন্ন হালাল। এ কারণে ইসলামী ব্যাংক সাধারণ ব্যাংক থেকে আলাদা এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য।

এখানে আপনার প্রশ্ন আসে এই মুনাফা আসলে কিভাবে তৈরি হয় এবং ব্যাংক কিভাবে গ্রাহককে তা প্রদান করে?

আপনি যখন আপনার টাকা ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টে জমা রাখেন ব্যাংক সেই টাকা অলসভাবে ফেলে রাখে না বরং ব্যাংক সেই অর্থকে ব্যবহার করে বৈধ ব্যবসা বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। যেমন শিল্প কারখানায় পণ্য উৎপাদনে অর্থায়ন করা বড় কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহে সহায়তা করা নির্মাণ কাজের অর্থায়ন কিংবা বৈধ আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা। এগুলো সবই শরীয়া মোতাবেক বৈধ ব্যবসা যেখানে সুদের কোন জায়গা নেই।

ব্যাংক এসব ব্যবসা থেকে যে লাভ করে সেই লাভের একটি অংশ ব্যাংক নিজেরা রাখে এবং বাকিটা গ্রাহকদের মধ্যে বন্টন করে। আপনি যে টাকার মালিক সেই টাকার ভিত্তিতেই আপনার মুনাফার হিসাব করা হয়। এই বন্টিত লাভ কেই বলা হয় মুনাফা। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। ধরুন আপনি ইসলামী ব্যাংকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা রাখলেন ব্যাংক সেই টাকা কোন ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করল মাস শেষে বা তিন মাস পর ব্যাংক সেই ব্যবসার মোট লাভ গণনা করবে। তারপর ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে আপনার জমার উপর ভিত্তি করে মুনাফা আপনার একাউন্টে জমা করে দেবে।

তবে মনে রাখতে হবে ব্যবসায়ী যেমন সবসময় একই পরিমাণ লাভ হয় না তেমনি ব্যাংকে থেকেও সব সময় একই হারে মুনাফা পাওয়া যাবে না। কোন মাসে মুনাফা বেশি হতে পারে আবার কোন মাসে তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। এটি ইসলামী ব্যাংকিং এর মূল বৈশিষ্ট্য কারণ এখানে প্রকৃত লাভ ক্ষতির ভিত্তিতেই মুনাফা ভাগ করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় মোদারা বা ভিত্তিক বিনিয়োগ। এখানে মূলধন দেন গ্রাহকরা আর ব্যবসা পরিচালনা করে ব্যাংক। লাভ হলে উভয়পক্ষে ভাগাভাগি করে নেয়। তবে ক্ষতিকর ড্রাইভার মূলধন প্রদানকারীর উপর নির্ভর্তায় নি যদিও ব্যাংক সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে বি নিয়োগ পরিচালনা করে।

সাধারণত ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের মাসিক ছয় মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে মুনাফার প্রদান করে। নির্দিষ্ট সময় শেষে মুনাফার অর্থ সরাসরি আপনার একাউন্টে জমা হয়ে যায়। ফলে আপনাকে আলাদাভাবে কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। সব মিলিয়ে বলা যায় ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট মুনাফা পাওয়ার মানে শুধু আর্থিক নাম নয় বরং মানসিক শান্তিও। কারণ আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার আই হালাল এবং শরীয়া মোতাবেক অর্জিত হচ্ছে। তাই ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে সাধারণ ধারনা রাখতে হবে। 

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার পর চেক বই পাওয়ার নিয়ম

ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার পর প্রয়োজনে আপনি চেক বই নেওয়ার সুবিধা পাবেন। তবে চেক বই পাওয়া সম্পূর্ণ কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের উপর নির্ভর করে। এই নিয়মগুলো মেনে চললেই আপনি সহজেই আপনার চেক বই হাতে পেতে পারবেন। প্রথমত অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যদি আপনি চেক বই নিতে চান তবে অবশ্যই ফর্মে এই অনুরোধ জানাতে হবে। সেভিংস একাউন্ট ফর্ম এর একটি অংশ লেখা থাকে "ডু ইউ রিকোয়ার এ চেক বুক"  সেখানে ইএসটিক দেওয়ার পর ব্যাংক আপনার চাহিদা অনুযায়ী চেক বই প্রসেস শুরু করবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফর্মে চেক বই নেওয়ার অনুরোধ না থাকলে ব্যাংক সক্রিয়ভাবে চেক ব্যয় প্রদান করবে না।

অ্যাকাউন্ট খোলার পর ব্যাংক আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করে সমস্ত তথ্য সঠিক থাকলে এবং অ্যাকাউন্ট সংক্রিয় হলে সাধারণ তিন থেকে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে প্রথম চেক বই প্রস্তুত করা হয়। এরপর ব্যাংক আপনার মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস পাঠাবে এসএমএস এ লেখা থাকে আপনার চেক বই প্রস্তুত নির্দিষ্ট শাখা থেকে গ্রহণ করুন। চেক বই সংগ্রহ করার জন্য ব্যাংকে গেলে আপনার সঙ্গে অবশ্যই নিতে হবে জাতীয় পরিচয় পত্র এন আই ডি কার্ড একাউন্ট নম্বর এবং একাউন্ট খোলার রিসিট যদি থাকে। ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকে ফর্মে স্বাক্ষর করার পরে চেক বই আপনাকে হাতে দেওয়া হবে।

যদি কেউ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় চেক বই না নেয় তবুও পড়ে চেক বই পাওয়ার সুযোগ আছে। সেই ক্ষেত্রে গ্রাহককে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে একটি আলাদা ফোরম পূরণ করতে হবে এবং ব্যাংক সেই অনুযায়ী চেক বইয়ের প্রদান করবে। সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংকে চেক বই পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ সহজ এবং স্বচ্ছ। মূল বিষয় হলো ফর্ম এর সঠিকভাবে অনুরোধ জানানো সমস্যা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখা এবং ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করা। এতে আপনার দ্রুত এবং ঝামেলা হীন ভাবে হাতে পৌঁছে যাবে।

মহিলাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম

বর্তমানে অনেক মহিলা স্বাবলম্বী হতে চাইছেন এবং নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহে। ইসলামী ব্যাংক এই দিকটি গুরুত্ব দিয়ে মহিলাদের জন্য সহজ নিয়মে সেভিংস একাউন্ট করার সুযোগ দিচ্ছে। এটি কেবল নিরাপদ নয় বরং শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়া পূর্ণ হালাল এবং নির্ভরযোগ্য। প্রথম ধাপ হিসেবে আপনাকে নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যাংক থেকে সেভিংস একাউন্ট খোলার আবেদন ফরম চাইতে হবে। বর্তমানে অনেক শাখায় মহিলাদের জন্য আলাদা সার্ভিস রয়েছে। যেখানে মহিলা গ্রাহকরা সহজে এবং খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।

অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কাগজপত্র জমা দিতে হয় এগুলো হল
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্ট মূলকপি ও ফটোকপি উভয়ের প্রয়োজন।
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ পরিষ্কার ছবি যা বর্তমানে সময়ে তোলা হতে হবে।
  • বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ এর জন্য বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল বা অন্য কোন সরকারি বিলের কপি জমা দিতে হবে।
  • এটি সেই ব্যক্তির জন্য যিনি আপনার অনুপস্থিতির মৃত্যুর পর একাউন্টে টাকা গ্রহণ করবেন।
যদি কেউ গৃহিনী হন এবং নিজস্ব কোন আয় না থাকে তখন পরিবার বা স্বামীর সহায়তায় একাউন্ট খোলা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে আয় সম্পর্কিত তথ্য ফর্মে স্বামীর পেশা উল্লেখ করা যায়। অনেক সময় ব্যাংক নমুনাও চাইতে পারে যা প্রদানের পর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। একাউন্ট খোলার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি ছোট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয়। সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ফরম পূরণ ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একাউন্ট চালু করে দেয়।

অ্যাকাউন্ট খোলার পর মহিলা গ্রাহক চাইলে এটিএম কার্ড এবং চেক বইয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। ইসলামী ব্যাংকের সেবা মহিলাদের জন্য সহজ নিরাপদ এবং স্বচ্ছ ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ায় অনেকেই মহিলায় ইতিমধ্যে নিজের নামে একাউন্ট খুলেছেন।

সব মিলিয়ে বলা যায় যদি আপনি স্বাবলম্বী হতে চান নিরাপদ ভাবে টাকা জমা রাখতে চান এবং হালালভাবে মুনাফা উপার্জন করতে চান তাহলে ইসলামী ব্যাংকে মহিলাদের জন্য সেভিংস একাউন্ট খোলা একটি সহজ নির্ভরযোগ্য পথ। তাই আপনাকে সর্ব প্রথম ভালোভাবে জেনে নিতে হবে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। 

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চালানোর নিয়ম ও নিরাপত্তা

ইসলামী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খোলার পর কাজ এখানে শেষ হয় না। অ্যাকাউন্ট নিয়মিত চালানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু এটি আপনার পরিশ্রমের টাকা নিরাপদ ভান্ডার তাই কিছু সচেতনতা মেনে চললেই আপনি নিশ্চিন্তে ব্যাংকিং করতে পারবেন।

  • প্রথমত নিয়মিত লেনদেন করুন মাসে অন্তত একবার টাকা জমা বা উত্তোলন করলে একাউন্ট সংগ্রহ থাকে। অনেকদিন লেনদেন না করলে ব্যাংক একাউন্ট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করে দিতে পারে তাই নিয়মিত লেনদেন রাখা জরুরী।
  • চেক এবং এটিএম কার্ড ব্যবহারের সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • চেক ব্যবহার করলে সঠিকভাবে তারিখ টাকার পরিমাণ এবং স্বাক্ষর নিশ্চিত করতে হবে ভুল তথ্য দিলে চেক বাতিল হতে পারে।
  • এটিএম কার্ড ব্যবহারের সময় পিন নম্বর গোপন রাখতে হবে কোন অচেনা ব্যক্তিকে আপনার পিন বা কার্ড নম্বর দেবেন না।
  • নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর কার্ড নম্বর বা পিন নাম্বার কখনোই কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
  • ফোন কল বা মেসেজ কেউ ব্যাংকের পরিচয় তথ্য চাইলে কখনো সরবরাহ করবেন না।
  • কোন সন্দেহজনক লেনদেন দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ শাখায় জানিয়ে দিন।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে চললে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এছাড়া নিয়মিত লেনদেন ও সতর্কতা মেনে চললে আপনি ইসলামী ব্যাংকের হালাল এবং শরীয়া মোতাবেক ব্যাংকিং সেবা নিরাপদে উপভোগ করতে পারবেন। সব শেষে বলা যায় সঠিকভাবে নিয়ম মেনে ব্যাংকিং করলে একদিকে যেমন আপনার টাকা নিরাপদ থাকে। অন্যদিকে আপনি সুস্থ ও নিশ্চিত মন নিয়ে ব্যাংকিং এ হালাল মুনাফা উপার্জন করতে পারবেন।

লেখকের শেষ কথা

সবশেষে বলা যায় ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট খোলা কেবল একটি সাধারণ ব্যাংকিং প্রক্রিয়া নয়। এটি আপনার আর্থিক নিরাপত্তা সঞ্চয় নিশ্চয়তা এবং মানসিক শান্তির এক শক্তিশালী প্রতীক। ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ায় আপনার টাকা সম্পূর্ণ হালাল এবং নিরাপদ থাকে। নিয়মগুলো ভালোভাবে বোঝার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে নিকটস্থ শাখায় গেলে কয়েকদিনের মধ্যে একাউন্ট একটিভ হয়ে যায়।

এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি নিজের সঞ্চয় বাড়াতে হালাল মুনাফা উপার্জন করতে এবং আর্থিক ভবিষ্যৎকে আরো সুন্দর করতে পারবেন। ছোট এই পদক্ষেপটা আপনার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং অন্তর নির্ভরতার পথে বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। ইসলামী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট শুধু আজকের জন্য নয় বরং আগামীকালও আপনার নিরাপদ আর্থিক যাত্রার ভিত্তি স্থাপন করবে। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এডভেঞ্চার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url