“কানাডা যেতে কত টাকা লাগে: স্টাডি, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসার সম্পূর্ণ গাইড”
কানাডা যেতে খরচ, ভিসা, স্টাডি ও ওয়ার্ক পারমিট, বেতন ও বয়সসীমা নিয়ে সব তথ্য এক জায়গায়। যদি আপনি জানতে চান কানাডা যেতে কত টাকা লাগে এবং কিভাবে ভিসা পাওয়া যায় তবে প্রথমে আপনাকে কানাডা সম্পর্কে কিছু ধারনা নিতে হবে। অপূর্ব সুন্দর এই দেশটি যেন ছবির মত একেবারে পিকচার পোস্টকার্ডের মত মনোমুগ্ধকর। কানাডার নাম শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠে বরফে মোরা সাদা পাহাড় আর চেরি ব্লসমের রঙিন দৃশ্যপট।
বহু যুগ ধরে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে মানুষ কানাডায় অভিবাসন করছে। পৃথিবীর উন্নত ও
জনপ্রিয় দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম। এখানে উচ্চশিক্ষা চাকরি বা পর্যটনের
উদ্দেশ্যে কানাডা ভ্রমণ করার ইচ্ছে অনেকেরই থাকে। তবে শুধু আগ্রহ থাকলে কানাডা
যাওয়া সম্ভব নয় এজন্য প্রয়োজন সঠিক যোগ্যতা ও প্রস্তুতির। চলুন তাহলে সমস্ত
বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ কানাডা যেতে কত টাকা লাগে
- কানাডা যেতে কত টাকা লাগে
- কানাডা যেতে কি কি লাগে
- কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন
- কানাডা ভিসা পাওয়ার উপায়
- কানাডায় কোন কাজের চাহিদা বেশি
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- কানাডা যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ
- কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন কত
- কানাডা যেতে কত বছর বয়স লাগে
- কানাডায় যেতে কতক্ষণ সময় লাগে
- বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার উপায়
- লেখকের শেষ কথা
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছে। কেউ বসবাসের জন্য কেউ
উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে আবার কেউ চাকরির খোঁজে। আমাদের দেশ থেকেও প্রতিবছর হাজার
হাজার মানুষ স্টাডি টুরিস্ট ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কানাডা ভ্রমণ করছে। যদি আপনি
পড়াশোনার জন্য কানাডা যেতে চান তাহলে প্রায় ৬ থেকে ১১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ
হতে পারে। তবে আপনি যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে খরচ স্বাভাবিকভাবেই অনেক
কমে যাবে। অন্যদিকে ভ্রমণ ভিসায় গেলে মোটামুটি চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়
করে কানাডা ঘুরে আসা সম্ভব হবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হয়। সাধারণত ৯ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা
পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে তা কমও হতে পারে তবে আপনি যদি ভিসা
প্রসেসিং নিজে করেন তাহলে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যাবে। কিন্তু দালাল বা
এজেন্সির মাধ্যমে করলে খরচ বেড়ে যেতে পারে যা আপনার বাজেটের বাইরে চলে যেতে
পারে।
কানাডায় যেতে কি কি লাগে
বাংলাদেশ থেকে মূলত তিনটি ভিসা ক্যাটাগরিতে আপনি কানাডায় ভ্রমণ করতে পারবেন
স্টাডি ভিসা টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। কানাডা যাওয়ার আগে
স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে কিছু প্রশ্ন আসে যেমন সেখানে গিয়ে কেমন ভাবে জীবন
যাপন করব? কোন পেশায় যুক্ত হব? আয় কত হবে? এবং সেই আয়ে কি নিজেও পরিবারকে
ঠিকভাবে চালানো সম্ভব হবে?
কানাডা যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিসার ধরন বা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা
হয়। নিচে ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনের কাগজপত্র তুলে ধরা হলো
কানাডা ভিসার জন্য যা যা প্রয়োজন
- বৈধ পাসপোর্ট কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে
- আইএলটিএস এসকর ন্যূনতম ৬.৫
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট
- কানাডিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার শিক্ষা ভিসার জন্য প্রয়োজন হবে।
- কানাডিয়ান কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার এটি প্রয়োজন হবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য.
- বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সনদ অর্থাৎ আপনি যদি টুরিস্ট ভিসা যান তাহলে এটি প্রয়োজন হবে।
এই নথি পত্র গুলো সম্পন্ন থাকলে আপনি সহজেই কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তবে সর্বদা মনে রাখবেন ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত এজেন্সি বা
সরাসরি কানাডার হাইকমিশনে যোগাযোগ করা সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
কানাডা একটি অভিবাসী বান্ধব উন্নত দেশ- যেখানে প্রতিবছর প্রায় তিন থেকে চার লক্ষ
মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বসবাস শুরু করে। কেউ সরাসরি পার্মানেন্ট
রেসিডেন্সি {PR} ভিসা নিয়ে আসেন, কেউ আবার শিক্ষার্থী বিষয়ে এসে পড়াশোনা শেষে
চাকরিতে যুক্ত হয়ে পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে থেকে যান। অনেকে নিজ দেশের সামাজিক বা
রাজনৈতিক সমস্যার কারণে রিফিউজি ভিসা নিয়ে কানাডায় নাগরিকত্ব লাভ করেন। আবার
অনেকেই শুধুমাত্র টুরিস্ট ভিসায় এসে নির্দিষ্ট সময় পর দেশে ফিরে যান।
এদের পাশাপাশি আরো একটি বড় অংশ আছে যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কানাডায়
প্রবেশ করেন। সাধারণত তারা নির্দিষ্ট কিছু বছর কাজ করার পর নাগরিকত্ব পাওয়ার
যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে অনেক সময় দেখা যায় কানাডায় কাজের সুযোগ পাওয়ার আশায়
অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হন বিশেষ করে ভিসা প্রক্রিয়ায়। তাই প্রতারণা থেকে
বাঁচতে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী।
মনে রাখতে হবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সরাসরি কানাডায় প্রবেশ করা যায় না এটি
মূলত কানাডার শ্রম বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কোন কানাডিয়ান
কোম্পানি যদি স্থায়ীভাবে উপযুক্ত কর্মী না পায় তখনই তারা বিদেশ থেকে কর্মী
নিয়োগের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে। সাধারণত তারা প্রথমে স্থানীয়ভাবে
বিভিন্ন চাকরি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয়। একাধিকবার বিজ্ঞাপন দেয়ার পরও যোগ্য
প্রার্থী না পেলে তখন সরকার তাদের বিদেশ থেকে লোক আনায় অনুমোদন দেয়। কাজের
সুযোগ পান
কানাডা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়
কানাডা ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া বোঝার পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে কানাডায় যেতে
মোট কত খরচ হতে পারে। সরাসরি আবেদন করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রস্তুত
রাখা অত্যন্ত জরুরী। আপনার নথিগুলো যত বেশি প্রফেশনাল ও নির্ভুল হবে ভিসা পাওয়ার
সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে।
একটি উচ্চমানের সিভি {CV} তৈরি করা হলো প্রথম ধাপ। সিভিটি যেন আকর্ষণীয় ও
প্রফেশনাল ভাবে সাজানো হয় সেটি খেয়াল রাখুন। ইউরোপীয় ফরম্যাটে তৈরি করা সিভি
বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। সিবি ১ পৃষ্ঠার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন এবং নিজের
শিক্ষাগত যোগ্যতা কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। অপ্রয়োজনীয় বা
সম্পর্কহীন কোন তথ্য যুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
ছিভির পাশাপাশি একটি দৃষ্টিনন্দন কভার লেটার তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি
আপনার আবেদন পত্রের প্রথম পরিচয় তাই প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা কভার লেটার
লিখুন। এতে উল্লেখ করুন কেন আপনি ওই পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত এবং কিভাবে আপনি
কোম্পানিতে আবেদন রাখতে পারবেন।
আপনার পূর্ববর্তী চাকরির সার্টিফিকেট বা অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র ভিসা প্রক্রিয়ায়
বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
পাসপোর্ট ও অন্যান্য পরিচয় পত্র গুলো ইংরেজিতে অনুবাদন করে নোটারি করা থাকা
আবশ্যক।
যারা দ্রুত ভিসা পেতে চান তাদের জন্য গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্ক্রিন প্রোগ্রাম একটি
দারুন বিকল্প হতে পারে। এই বিশেষ প্রোগ্রামটি মূলত দক্ষ কর্মীদের জন্য তৈরি, যার
মাধ্যমে আবেদনকারীরা দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন এবং তুলনামূলকভাবে
উচ্চ বেতনে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
কানাডায় কোন কাজগুলো চাহিদা সবচেয়ে বেশি
যারা কানাডায় কাজের সুযোগ নিতে চান তাদের প্রথমে জানা উচিত কানাডায় বর্তমানে
কোন কোন পেশার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ কানাডা এমন একটি দেশ যেখানে প্রায় সব
ক্ষেত্রেই দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের প্রয়োজন রয়েছে। যদি আপনার নির্দিষ্ট কোন
ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা থাকে তাহলে কানাডায় চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কানাডার স্থানীয় অনেক নাগরিক তুলনামূলকভাবে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে আগ্রহী
নন। ফলে এসব ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীদের চাহিদা অনেক বেশি। নিচে কানাডায় বর্তমানে
যেসব বিষয় নিয়মিত কর্মী প্রয়োজন দেখা যায় সেগুলোর একটি তালিকা দেয়া হলো।
কানাডায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন পেশা সমূহ হলো
- নির্মাণ শ্রমিক
- সুপারভাইজার
- রড বাইন্ডার
- ট্রেনিং অপারেটর
- কৃষি খাতের কর্মী
- স্বাস্থ্য খাতের কর্মী নার্স কেয়ারগিভার ইত্যাদি
- আইটি সেক্টর
- গ্রাফিক ডিজাইনার
- ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- ডেলিভারি ম্যান
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী
- ক্লিনার
- বিক্রয় প্রতিনিধি বা সেলসম্যান
- হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজার
- ফিজিওথেরাপিস্ট
- ফার্মাসিস্ট
- হিসাব রক্ষক
- মেকারনিকাল টেকনিশিয়ান
কানাডার শ্রম বাজারে উপরোক্ত খাত গুলোতে দক্ষতা অভিজ্ঞতা ও সার্টিফিকেট থাকলে
আপনার জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হওয়া অনেক সহজ হবে।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে এবং কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় এই
দুইটি বিষয়ের জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি সত্যিই সেখানে কাজ করার ইচ্ছে
রাখেন। বর্তমান সময়ে কানাডার পর্যটন ও অর্থনীতি এমন গতিতে উন্নতি করছে যে ধারণা
করা হচ্ছে 2025 সালের মধ্যে ট্যুরিজম সেক্টর থেকে প্রায় ২৫১ বিলিয়ন ডলার দেশের
জিডিপিতে যুক্ত হবে। এর মানে দক্ষ কর্মীর চাহিদা এখন রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি
পাচ্ছে এই বাটি চাহিদা মেটাতে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ IRCC নানান নিয়মে
আরো সহজ ও নমনীয় FLEXIBLE হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে ভিজিটর ভিসা থেকে সরাসরি
ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে রূপান্তর করা সম্ভব নয়।
ভিজিটর ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট এ রূপান্তরের সুযোগঃ ভিজিটর ভিসা
সাধারণত ভ্রমণ আত্মীয়-স্বজন দেখা বা স্বল্পমেয়াদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে দেওয়া
হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করলে কানাডার ভেতর থেকেই ওয়ার্ক পারমিটের
জন্য আবেদন করা যায়। ২০২৪ সালে কানাডায় মোট ৬.৭ লাখেরও বেশি ওয়ার্ক পারমিট
ইস্যু করা হয়েছিল যার প্রায় ১০% আবেদনকারী ইতিমধ্যে কারেন্ডার ভিতরে অবস্থান
করেছিলেন। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকলে আপনার পক্ষেও এটি সম্ভব।
প্রথম ধাপঃ চাকরির অফার লেটার ও
LMIA অনুমোদন: ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রথমে আপনাকে কানাডিয়ান
কোন নিয়োগ কর্তার কাছ থেকে চাকরির অফার লেটার পেতে হবে। এরপর সে নিয়োগকর্তাকে
লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট LMIA করতে হবে। LMIA মূলত
প্রমাণ করে যে চাকরিটি কোন কানাডিয়ান নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা পূরণ করতে
পারছে না তাই বিদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়াটি টেম্পোরারি
ফরজিং ওয়ার্কার প্রোগ্রাম TFWP এর অধীনে সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে হসপিটালিটি
কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি প্লাম্বিং ও হোটেল সার্ভিস এর মত সেক্টরে এই ভিসার চাহিদা
সবচেয়ে বেশি।
বিকল্প আরেকটি কথা আছে সেটি হলঃ স্টাডি পারমিট থেকে ওয়ার্ক পারমিট করার
আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হল স্টাডি পারমিট রোড। আপনি যদি কানাডায় ভিজিটর ভিসা থেকে
অনুমোদিত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তাহলে কানাডার ভেতর থেকেই স্টাডি
পারমিটে রূপান্তর করা সম্ভব। শিক্ষা চলাকালীন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার
অনুমতি থাকে যা পড়াশোনার খরচ সামলাতে সাহায্য করে। পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি
পোস্ট গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট অর্থাৎ PGWP এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
যার মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে কানাডায় টিউশন
কি ও জীবনযাত্রার তুলনামূ।
কানাডায় যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ
কানাডার যেতে কত টাকা লাগে তা অনেকেরই মাথায় আসে যখন আপনি কানাডায় যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নেবেন এবং আবেদন করার পরিকল্পনা করবেন তখন। আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো
জানা খুবই জরুরী যদি আপনি নিজে নিজে আবেদন করতে পারেন তাহলে খরচ অনেকটা কমিয়ে
আনা সম্ভব হবে। প্রথমে আপনাকে কানাডিয়ান সরকারের অফিসিয়াল জব পোর্টাল যার নাম
জব ব্যাংক এ যেতে হবে। গুগলে সার্চ করলে সহজেই এটি খুঁজে পাওয়া যায়। এটি
কানাডার সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য পোর্টাল। বিদেশ থেকে আবেদনকারীদের জন্য এখানে
একটি নির্দিষ্ট সেকশন রয়েছে যা শুধুমাত্র বিদেশি প্রার্থীদের জন্য তৈরি করা
হয়েছে।
এরপর আপনাকে আপনার পছন্দের চাকরিটি খুঁজে বের করতে হবে। সার্চ বক্সে যেমন ট্রাক
ড্রাইভার প্লাম্বার ইত্যাদি লিখে সার্চ করুন এবং সার্চ রেজাল্ট আশা ডেসক্রিপশন
ভালো ভাবে পড়ুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো who can apply for this
job যদি সেখানে লেখা থাকে vaild candidate / work permit
holders তাহলে আপনি আবেদন করতে পারবেন। শুধুমাত্র temporrary
residency লিখা থাকলে সেখানে আবেদন করবেন না।
চাকরিতে আবেদন করার আগে কোম্পানির ইমেইল ঠিকানা সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরী।
ডেসক্রিপশন এর নিচে থাকা sho how to apply আংশিক ক্লিক করলে কোম্পানির
অফিসিয়াল ইমেইল পাবেন। এটি সঠিকভাবে কপি করে রাখুন এরপর আপনার ব্যক্তিগত ইমেইল
একাউন্ট থেকে নতুন মেইল কম্পোজ করুন। সাবজেক্ট লিখুন application for আপনি
যে জবের জন্য এপ্লাই করবেন সেটির টাইটেল লিখে দিবেন এবং মেইলের বডিতে আপনার তৈরি
করা কভার লেটার টি কপি পেস্ট করুন। এছাড়াও এটাচমেন্ট হিসেবে আপনার cv এবং
অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেটযুক্ত করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে send বাটনে ক্লিক করে
মেইল পাঠিয়ে দিন।
মেইল পাঠানোর পর আপনার sent box এ গিয়ে নিশ্চিত হন যে মেয়েলটি সফলভাবে
পাঠানো হয়েছে সম্পন্ন করতে পারবেন এবং খরচ অনেকটা কমানো সম্ভব হবে।
কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন কত
কানাডায় যেতে কত টাকা লাগে এবং সর্বনিম্ন বেতন কত এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে
পড়ুন এই আর্টিকেলটি। কানাডা দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত। উত্তর
আমেরিকার একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ২০২৫ সালে কানাডায়
সর্বনিম্ন বেতন অঞ্চল ও প্রদেশ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত সাধারণ কাজের
ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন পায় ৫০.০০০ থেকে 60 হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। এই সীমার
নিচে কোন প্রদেশে সাধারণ কাজের জন্য বেতন দেয়া হয় না। এছাড়াও এখানে ওভারটাইম
কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ওভার টাইম কাজ করলে মাসিক ন্যূনতম বেতন প্রায় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা
পর্যন্ত শুরু হয়। কানাডায় কাজের বিভিন্ন ক্যাটাগরির রয়েছে এবং কাজের ধরনের উপর
ভিত্তি করে বেতন ও পরিবর্তিত হয়। নিম্নমানের কাজের ক্ষেত্রে এর বেতন সীমা থাকে।
আর উচ্চমানের কাজের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন পায় প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০
হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে।
কানাডা একটি উন্নত রাষ্ট্র হওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ
রয়েছে। সরকার নিয়মিত বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীদের এখানে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী কানাডার বিভিন্ন কাজের গড় ও বেতন এইভাবে রয়েছে।
মেডিকেল সেকশনটিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সেকশন সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া
যায়। উদাহরণস্বরূপ একজন ডাক্তার বছরের গর বেতন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার থেকে
৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ভারতীয় মুদ্রায় এটির প্রায় দুই কোটি
রুপি এবং বাংলাদেশি টাকায় আরো বেশি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের যেমন কার্ডিওলজিস্ট ও
নিউরোলজিস্ট বেতন আরো বেশি হতে পারে। নার্সদের গড় বেতন প্রায় বছরের প্রায় ৭০
হাজার থেকে এক লাখ দশ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়।
ফার্মাসিস্ট এর ক্ষেত্রে বছরে গড় বেতন প্রায় ৯০০০০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার
পর্যন্ত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে তাই এই
খাতের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি। ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য মাসিক গড় বেতন প্রায় ৮০
হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ডাটা সাইন্সের চাহিদা কানাডায়
অনেক বেশি। সব সময় মনে রাখতে হবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কানাডায় অত্যন্ত মূল্যবান
করে। তাই দক্ষ কর্মীদের চাহিদা সর্বদা বেশি থাকে।
কানাডা যেতে কত বছর বয়স লাগে
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে তা জানার পাশাপাশি আমাদের জানা উচিত কানাডা যেতে
বয়সসীমা কত। বাংলাদেশী ভাই-বোনদের কাছে কানাডা এক স্বপ্নের ঠিকানা। যেখানে
প্রাকৃতিক বিশালতা ও সুন্দর পরিবেশে মিশে আছে। কানাডায় ভিসা পাওয়ার জন্য
বয়সসীমা ভিসার ধরনের অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে
কানাডায় যাওয়ার জন্য নূন্যতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। যারা কাজের উদ্দেশ্যে
কানাডায় যেতে চান তাদের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
টুরিস্ট ভিসার জন্য ১৮ বছরের নিচে থাকা ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন তবে এই
ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিভাবকের অনুমতি পাত্র থাকতে হবে। যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি
তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রোফাইল তৈরি করে কানাডায় আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করা
সম্ভব নয় ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য pnp প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কানাডায়
আসা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়। এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে চাকরির ক্ষেত্রে
আবেদন করতে সবচেয়ে উপযুক্ত বয়স হলো ২৯ থেকে ৩৫ বছর। এই বয়স সীমায় থাকা
প্রার্থীরা স্কোরিং এবং নির্বাচনের প্রাধান্য পেতে পারে।
কানাডায় যেতে কতক্ষণ সময় লাগে
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে তা জানার পাশাপাশি জানা জরুরি কানাডায় পৌঁছাতে কত সময়
লাগে। বাংলাদেশের যাত্রীদের জন্য সাধারণত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দর থেকে কানাডার প্রধান শহরগুলোতে ফ্লাইট পাওয়া যায়। প্রায় শহীদ ঢাকা
থেকে টরন্টো ভ্যানকুভার বা মন্ট্রিয়েল পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট থাকে না তাই
এক বা একাধিক ট্রানজিট এর মাধ্যমে যাত্রা করতে হয়।
সাধারণভাবে ঢাকা থেকে কানাডার যাত্রার মোট সময় লাগে প্রায় 15 থেকে 20 ঘন্টা এতে
ফ্লাইট টাইম এবং ট্রানজিট টাইম দুইটাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরাসরি ফ্লাইট
থাকলে সময় কিছুটা কমতে পারে। তবে ট্রানজিটের জন্য সাধারণত একবার দুইটি শহর থামতে
হয়। যাত্রার সময় ফ্লাইটের ব্র্যান্ড ট্রানজিট সময় আবহাওয়া এবং মৌসুমী চাহিদার
উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। পরিশেষে কানাডায় পৌঁছানোর সময় যদি পরিকল্পনা
করে রাখা হয় তাহলে যাত্রা সহজ এবং সুবিধাজনক হয়।
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার এখন অনেকেরই স্বপ্ন। এই যাত্রার জন্য বিভিন্ন
ভিসা ক্যাটাগরি এবং রুট রয়েছে। প্রধানত তিনটি উপায়ে বাংলাদেশী নাগরিকরা
কানাডায় যেতে পারেন যেমন
স্টাডি ভিসাঃ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়।
বাংলাদেশ থেকে যারা কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান তাদের অবশ্যই কানাডার
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করা
অবশ্যই জরুরী। স্টাডি ভিসার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় সপ্তাহের ২০
ঘন্টা কাজ করার অনুমতি পেতে পারেন। গ্রাজুয়েশন শেষে তারা পোস্ট গ্রাজুয়েশন
ওয়ার্ক পারমিট এর মাধ্যমে চাকরি করতে পারেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসাঃ যারা চাকরি করার উদ্দেশ্যে কানাডায় যেতে চান
তাদের জন্য এই ভিসা। ওয়ার্ক পারমিট পেতে হলে কানাডার কোন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে
চাকরির অফার লেটার এবং প্রয়োজনীয় হলে এল এম আই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এই
ভিসার মাধ্যমে আগত কর্মীরা নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পর স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার
সুযোগ পেতে পারেন।
টুরিস্ট ভিসাঃ স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণ পরিবার দেখা বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে
টুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু শর্ত পূরণ করলে ভিসার মাধ্যমে কানাডার
ভিতর থেকে ওয়ার্ক পারমিট বা স্টাডি পারমিট আবেদন করার সুযোগ থাকতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাওয়ার সময় সরাসরি ফ্লাইট বা ট্রানজিট ফ্লাইট ব্যবহার
করতে হয়। ঢাকা থেকে টরেন্ট কভার বা মন্ত্রী এল পর্যন্ত ফ্লাইটে মোট সময় প্রায়
১৫ থেকে ২০ ঘন্টা। যাত্রার সময় ফ্লাইটের ব্র্যান্ড ট্রানজিট সংখ্যা এবং আবহাওয়া
অনুসারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং
পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় যাত্রা সহজ দ্রুত এবং নিরাপদ করা
সম্ভব।
লেখকের শেষ কথা
কানাডায় সামার সিজনে ফলের ফ্যাক্টরিতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন হয়। এখানে যদি
আপনি সঠিকভাবে আবেদন করেন তাহলে সহজে কানাডার কাজের ভিসা পেতে পারেন। নিজে নিজে
ভিসা প্রসেসিং করলে এল এম আই এর মাধ্যমে চাকরির অফার নিয়ে পারমিট এম্বাসিতে জমা
দিতে হবে। তবে কানাডা এম্বাসিতে সরাসরি যাওয়ার দরকার নেই। আপনি VFS
GLOBAL এর মাধ্যমে নিজের ফাইল সাবমিট করতে পারবেন। ফাইল সঠিকভাবে জমা হলে
ভিসা পাওয়া সম্ভব।
ফলের ফ্যাক্টরিতে সাধারণত কোন বিশেষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না তবে কানাডার যে
কোন কোম্পানিতে কাজ করতে হলে দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এক বা দুটি কোম্পানিতে
শুধু বসে থাকা বদলে ধৈর্য ধরে অত্যন্ত ২০ থেকে ৫০টি কোম্পানিতে আবেদন করা উচিত।
যদি আপনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকে প্রথমে সেই কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। পরে সেই
অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে উন্নত দেশে আবেদন করা অনেক সহজ হবে। মনে রাখবেন কানাডায়
যাওয়ার জন্য দালাল নয় আপনার যোগ্যতা দক্ষতা এবং সঠিক প্রক্রিয়া সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষে আপনি নিশ্চয় জানতে পেরেছেন কানাডা যেতে কত টাকা
লাগে।





এডভেঞ্চার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url