কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য গাইড ২০২৫
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আপনি কি জানেন? শরীর সুস্থ
রাখতে প্রতিদিন কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া কতটা কার্যকর তা জেনে নিন। এই আর্টিকেলে
আমরা আলোচনা করেছি কিসমিসের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য ও উপকারিতা কোন কোন শারীরিক
সমস্যায় এটি উপকারী এবং কোথায় বিপদ হতে পারে তা জানবেন আজকের এই ব্লগে।
আজকের এই আর্টিকেলে আপনি যা যা জানতে পারবেন গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস, ওজন
নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন সবকিছু আছে এখানে। এবং আরো জানতে পারবেন
কখন কিসমিস খাওয়া উচিত নয় এবং তারা এই একে এড়িয়ে চলবেন তাহলে চলুন এক নজরে
দেখে নিই এর উপকার - অপকার - নিয়ম ও সর্তকতা।
পেজ সুচিপত্রঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কিসমিস কি এবং এর পুষ্টিগুণ
- শরীর চর্চায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কিসমিস খাওয়ায় হজম শক্তির উন্নতি
- রক্তস্বল্পতায় কিসমিসের উপকারিতা
- ত্বকের জন্য কিসমিসের উপকারিতা
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস সতর্কতা ও উপকারিতা
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে কিসমিসের ভূমিকা
- শিশুদের জন্য কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
- প্রেগনেন্সিতে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও সাবধানতা
- ওজন নিয়ন্ত্রণে কিসমিস কতটা সহায়ক
- দাঁতের জন্য কিসমিস উপকারী না ক্ষতিকর
- কিসমিস খেলে কি ঘুম হয়
- প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
- কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা লেখকের শেষ কথা
কিসমিস কী এবং এর পুষ্টিগুণ
কিসমিস হলো শুকনো আঙুর, যা সাধারণত সূর্যের তাপে প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে তৈরি করা
হয়। এটি একটি জনপ্রিয় শুকনো ফল, যেটি মিষ্টি স্বাদের ও নানা গুনসম্পন্ন।
কিসমিসে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রতি
১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ২৯৯ ক্যালোরি থাকে, যা শরিরের দ্রুত শক্তি যোগায়।
কিসমিস হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং অস্ত্র পরিষ্কার রাখে।এটি একটি
প্রাকৃতিক চিনি হিসাবে কাজ করে, তাই চা বা দুধে চিনির পরিবর্তে কিসমিস ব্যাবহার
করা যেতে পারে। তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই বিবেচনায়
রাখা উচিত।
যেমন, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে পারে বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যারা
ডায়েট কন্ট্রেলে রয়েছেন , তাদের উচিত পরিমিত কিসমিস খাওয়া। তবে শিশুদের জন্য
এটি অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে প্রচুর শক্তি থাকে। এছাড়া এটি দাঁতের জন্যও
তুলানামূলক কম ক্ষতিকর, যদি ভালোভাবে মুখ ধোয়া হয়। এ কারণে কিসমিস একটি
পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যবান্ধব শুকনো ফল। তবে সব সময় কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা: শরীরচর্চায় এর ভূমিকা
যারা শরীরচর্চা করেন বা জিমে যান, তাদের জন্য কিসমিস হতে পারে আদর্শ একটি
প্রাকৃতিক এনার্জি সাপ্লিমেন্ট । এতে থাকা গুলুকোজ ও ফুরক্টোজ শরীরে দ্রুত
শক্তি সরবরাহ করে, যা এক্সারসাইজের আগে খেলে ক্লান্তি কমায়। অনেক স্ট্যামিনা
বাড়ে। অন্যদিকে এতে ফাইবার থাকায় মাংসপেশিকে ফুলিয়ে তোলে না, বরং সুস্থ রাখে।
তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জানলে বিপদ হতে
পারে।
আরো পরুনঃ ওজন কমাতে তোকমা খাওয়ার নিয়ম
ব্যায়ামের সময় যদি আপনি প্রয়োজনের বেশি ক্যালোরি খেয়ে ফেলেন, তাহলে ওজন বাড়িয়ে
দিতে পারে। তাই যারা ওজন কমানোর জন্য জিম করেন , তারা যেন কিসমিস পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণে রাখেন । তবে একমুঠো কিসমিস সকালে খেলে সারাদিনে ক্লান্তি দূর থাকে।
পাশাপাশি ৈএটি মুড ঠিক রাখতেও সাহায্য করে, কারণ এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও
বি-ভিটামিন । তাই বলা যায়, কিসমিস শরীরচর্চায় এর সহায়ক খাদ্য, তবে সচেতনভাবে
খাওয়া উচিত।
কিসমিস খাওয়ায় হজম শক্তির উন্নতি
হজমের সমস্যা বর্তমানে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।
কিসমিস খেলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ফইবার, যা
অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কিসমিস ভিজানো অবস্থায় খেলে তা আরও বেশি
উপকার করে। নিয়মিত সকালে কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটাই কমে আসে । যারা
দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিক ও অম্ব সমস্যায় ভুগছেন, তারা কিসমিস খাওয়া শুরু করতে
পারেন। তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় দিকেই নজর দেয়া
প্রয়োজন।
অনেক সময় অতিরিক্ত কিসমিস খেলে গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে, কারণ এতে প্রাকৃতিক
চিনির পরিমাণ অনেক বেশি ।এই চিনিগুলো পেটের ভিতর ফারমেন্ট হতে পারে, যা গ্যাস
সৃষ্টি করে। তাই যাদের হজম দুর্বল, তারা যেন পরিমাণ মতো কিসমিস খায়। িএকমুঠো বা
৮-১০ টি কিসমিস প্রতিদিন খাওয়াই যথেষ্ট। তা না হলে হজমের পরিবর্তে হজমজনিত
সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ কারণে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা নিতে হলে এর অপকারিতাও
মাথায় রাখা জরুরি । পরিমিত খেলে এটি হজমশক্তি বৃদ্ধির দারুণ একটি উপাদান।
রক্তস্বল্পতায় কিসমিসের উপকারিতা
রক্তস্বল্পতা, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি সমস্যা । কিসমিস খেলে
রক্তে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়, কারণ এটি প্রাকৃতিক আয়রনের ভালো উৎস। কিসমিসে থাকা
আয়রন হিমোগ্লবিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা রক্তের পরিমাণ বড়ায়। দিনে মাত্র
১০-১২ টি কিসমিস ভিজিয়ে খেলে রক্তস্বল্পতা অনেকটােই কমে যায় । বিশেষ করে যারা
রক্তদান করেন বা মাসিকের সময় দুর্বলতা অনুভব করেন, তারা কিসমিস নিয়মিত খেলে
উপকার পাবেন।
তবে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝে খাওয়া জরুরি । যদি কারও শরীরে
আয়রনের পরিমাণ আগেই বেশি থাকে, তাহলে অতিরিক্ত আয়রন জমে গিয়ে লিভারে সমস্যা
সৃষ্টি করতে পারেএছাড়া কিসমিসে উচ্চ ক্যালোরি থাকায় বেশি খেলে ওজন বাড়ে, যা
আবার রক্তচাপ বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করে। তাই কিসমিসকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে
চাইলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া ভালো। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে,
রক্তস্বল্পতা দূর করতে কিসমিস একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ত্বকের জন্য কিসমিসের উপকারিতা
ত্বকের সুস্থতা ও উজ্জ্বলতা রক্ষায় কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে
থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের কোষকে পুনর্গঠন করে ও বয়সের ছাপ
কমায়। নিয়মিত কিসমিস খেলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ব্রণ বা র্যাশের
পরিমাণ কমে । ত্বকে গ্লো আনতে ভেজানো কিসমিস খাওয়ার পাশাপাশি কিসমিস ভেজানোর
পর সে পানীয় খুবই আমাদের জন্য কার্যকর। তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা জানাটা জরুরী এতে থাকা প্রাকৃতিক সুগার অনেক সময় ত্বকের রেশ তৈরি
করতে পারে।
আরো পরুনঃ ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
বিশেষ করে যদি শরীরে ডিপফেকশন ঠিকভাবে না হয় পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে
চর্বি জমাতে পারে যা ত্বকে ব্রণ তৈরি করতে পারে। তাই ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত
কিসমিস না খাওয়া উচিত। কিসমিস খেতে হলে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত এছাড়া
ভিটামিন ই ও কপার কিসমিসে থাকে জাতকের স্থিতি স্থাপকতা বাড়ায়। এটি শুধু
বাহিরের দিকে নয় ভেতর থেকেও ত্বককে সুন্দর করে তোলে। তাই যারা প্রাকৃতিকভাবে
স্কিন কেয়ার করতে চান তাদের জন্য কিসমিস হয়ে উঠবে একটি সাশ্রয়ী ও
স্বাস্থ্যকর সমাধান।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস সতর্কতা ও উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস খাওয়ার আগে কিছু বিষয় খুব ভালোভাবে খেয়াল
রাখা খুব জরুরী। কারণ কিসমিসে থাকা চিনির পরিমাণ অনেক যা রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা
দুটো বাড়াতে পারে। তবে এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয় বরং পরিমিতভাবে খেলে কিছু
উপকারও পাওয়া যায়। এতে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিক রোগীদের
দেহে ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু পরিমান
কিসমিস খাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের সহনশীলতা উন্নত করে।
তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকার ও অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে অতিরিক্ত খেলে তা
বিপদজনক হতে পারে। রক্তের চিনির মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে শরীরে ঝুঁকি তৈরি করতে
পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া উচিত নয়।
যারা খেতে চান তারা যেন দিনে .৫-৬ টি ভেজানো কিসমিস খান এবং রক্তে শর্করা
মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করেন। তাই এই মিষ্টি শুকনোফলটি স্বাস্থ্য রক্ষার উপর
ব্যবহার করতে পারেন।
হৃদরোগ প্রতিরোধে করতে কিসমিসের ভূমিকা
কিসমিসে পটাশিয়াম ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা হৃদপিন্ডের জন্য খুবই
উপকারী। এটি খেলে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদসম্পন্ন স্বাভাবিক রাখে।
যারা হাই ব্লাড প্রেসার ভোগেন তাদের জন্য কিসমিস সহায়ক হতে পারে। এছাড়া এতে
থাকা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস পরিষ্কার রাখে ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি বিবেচনা করে খাওয়া
উচিত। অতিরিক্ত কিসমিস খেলে শরীরের অতিরিক্ত ফাইবার জমে গিয়ে ডায়রিয়া হতে
পারে যা হৃদ রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়া অতিরিক্ত ক্যালরি শরিরের উপর চাপ ফেলতে পারে তাই কিসমিস খেতে হবে পরিমাণ
মতো ।আপনি যদি শরিরের সাথে সাস্থ ভালাও রাখতে চান তাহলে নিয়ম মেনে খেতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি হৃদরোগী প্রতিদিন সকালে ৮ থেকে ১০ টি ভেজানো কিসমিস খান।
এতে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই বলা
যায় কিসমিস হৃদরোগ প্রতিরোধ করাতে কার্যকর হলেও এর সঠিক ব্যবহার জানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের জন্য কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
শিশুদের পুষ্টির জন্য কিসমিস একটি দারুন উৎস হতে পারে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক
চিনির পাশাপাশি আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও ফাইবার। এই উপাদান গুলো শিশুর
হাড় ও দাঁত গঠন করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিশুরা যখন স্কুলে যায় তখন তাদের
শক্তি ও মনোযোগের জন্য কিসমিস একদম উপকারী একটি খাদ্য। সকালে নাস্তার সময়
কিসমিস দিলে শিশুদের ক্ষুধা মেটে ও মন ভালো থাকে। কিসমিস হজম করতে অনেক সহায়ক
হওয়ার পরে পেটের সমস্যা কমাতে খুবই সাহায্য করে। তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে শিশুদের বেশি খাওয়ালে সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে।
এছাড়া যদি শিশুদের ঠিকভাবে ব্রাশ না করার অভ্যাস থাকে তাহলে কিসমিস দাঁতে লেগে
ক্যাভিটি তৈরি করতে পারে। তাই প্রতিদিন .৫ থেকে ৬ টি কিসমিস শিশুদের জন্য
যথেষ্ট। পাশাপাশি শিশুদের পানি খাওয়ার অভ্যাস করানো খুবই দরকারি যাতে হজম ঠিক
থাকে। কিসমিসের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায়
যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে পরিমাণ ভাবে শিশুদের খাওয়াতে হবে।
প্রেগনেন্সিতে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও সাবধানতা
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া মায়ের ও শিশুর দুজনের জন্যই উপকারী হতে পারে। কারণ
এতে থাকা আয়রন ও ক্যালসিয়াম গর্ভবতী নারীর রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য
করে এবং শিশুর হাড়ের গঠনে অনেক সাহায্য করে থাকে। অনেক গর্ভবতী নারী কিসমিস
খেয়ে সকাল শুরু করেন যা বমি ভাব এবং শরীরের দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।
কিসমিস হজম শক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় তবে গর্ভাবস্থায় কিসমিস ভিজিয়ে
খাওয়া উপকারিতা ও অপকারিতা ভালোভাবে জানা দরকার। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে গ্যাস
বা রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে যদি মা যেষ্টেশনাল ডায়াবেটিসে ভোগেন তাহলে কিসমিস খাওয়া কম করতে
হবে। তাই গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।
দিনে 8 থেকে ১০ টি ভেজানো কিসমিস খেলে অধিকাংশ সময় উপকারী পাওয়া যায়। তবে
যেকোনো ধরনের নতুন খাবার খাওয়ার আগে সচেতন থাকা খুবই জরুরী। কিসমিস প্রাকৃতিক
হলেও প্রতিটি মানুষের শরীরে একইভাবে প্রতিক্রিয়া করে না তাই সাবধানতা থাকা
জরুরী।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কিসমিস কতটা সহায়ক
অনেকে মনে করেন কিসমিস খাওয়ার মানে ওজন বেড়ে যাবে কিন্তু সত্যটা একটু আলাদা।
কিসমিসে থাকা ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে পরিমাণ মতো খেলে খিদা কমায় ও
দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখে। এজন্য এটি ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা
হয়। সকালে গরম পানির সঙ্গে ভেজানো কিসমিস খেলে তা দেহ থেকে টক্সিন বের করতে
সাহায্য করে। এটি হজম শক্তি বাড়িয়ে চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে বুঝবেন কতটুকু পরিমাণ
খেলে উপকার হবে। অতিরিক্ত কিসমিস খেলে ক্যালরি বাড়ে যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে
পারে। বিশেষ করে যারা অফিসে বসে কাজ করেন তাদের জন্য অতিরিক্ত চিনি ও ক্যালোরি
ঝুঁকিপূর্ণ। ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে দিনে 8 থেকে.১০ টি কিসমিসই
যথেষ্ট। এর পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শুধু
কিসমিস খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব হয় না তবে এটি একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ
করতে পারে।
দাঁতের জন্য কিসমিস উপকারী না ক্ষতিকর
কিসমিস একটি মিষ্টি জাতীয় শুকনো ফল তাই অনেকেই মনে করে এটি দাঁতের জন্য খারাপ।
কিন্তু কিসমিসের রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল যা দাতের জন্য ব্যাকটেরিয়া দূর করতে
সাহায্য করে। এটি মুখের দুর্গন্ধ কমায় ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য
করে। তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে দাঁতের ক্যাভিটি হতে
পারে। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানলে
দাঁতের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে যদি কিসমিস খাওয়ার পরে মুখ না ধোয়া হয় বা ব্রাশ না করা হয় তাহলে
সমস্যা বাড়তে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায় তাই কিসমিস
খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা উচিত। এছাড়া যারা বেশ পড়েন বা দাঁতের কোন
চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ডেন্টিস্টের পরাম দাঁতের জন্য কিসমিস উপকারী না
ক্ষতিকরর্শ অনুযায়ী কিসমিস খাওয়াই ভালো। কিসমিস দাঁতের জন্য একদিকে উপকারী
হলেও সঠিক যত্ন না নিলে ক্ষতিও হতে পারে।
কিসমিস খেলে কি ঘুম ভালো হয়?
নিদ্রাহীনতা বর্তমানে অনেকের সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। গবেষণায় জানা গেছে
কিসমিস খাওয়ার ফলে ঘুমানের মান উন্নতি হয়। কারণ এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও
ভিটামিন বি-৬ মস্তিষ্কে শান্ত করে এবং সে রোটন নিন উৎপন্ন করতে সহায়তা করে।
ঘুমানোর আগে এক মুঠো ভেজানোর কিসমিস খেলে অনেকে আরামে ঘুমাতে পারেন। এটি মানসিক
চাপও কমাতে সাহায্য করে।
তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ভালোভাবে না জানলে রাতে বদ হজম
বা গ্যাস হতে পারে যা ঘুমের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত ক্যালরি থাকায় রাত্রি
কালিন হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই ঘুমের জন্য কিসমিস খেতে চাইলে সেটা হওয়া উচিত
পরিমাণ মত। ৫ থেকে ৬ টি কিসমিস ঘুমের আগে খাওয়া যেতে পারে। যারা ইনসম্মানীয়
ভুগছেন তারা প্রাকৃতিক ঘুমের সহায়তা হিসেবে কিসমিস খেতে পারেন তবে পরিমাণ মতো
এবং নিয়ম মেনে খেতে হবে।
প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা সবচেয়ে ভালো। অনেকেই শুকনো
অবস্থায় কিসমিস খান কিন্তু ভেজানো অবস্থায় কিসমিস খেলে বেশি উপকারী হয়। রাতে
পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে কিসমিসের গুনাগুন আরো ভালোভাবে কাজে লাগে।
প্রতিদিন .৮ থেকে ১২ টি কিসমিস খাওয়া যেতে পারে শরীরের চাহিদা ও অবস্থা
অনুযায়ী।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিবেচনায় রেখে এটি কখন কিভাবে
খাবেন তা জানা খুবই জরুরী। খালি পেটে খাওয়া যায় তবে দুধ বা ওটসের সঙ্গে মিশে
খাওয়াই ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিক, বদহজমের সমস্যা আছে তাদের
জন্য কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। খাবারের সঙ্গে কিসমিস যোগ করলে তা খাবারের
স্বাদও ও পুষ্টিগণ বাড়ায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নিয়ম মেনে কিসমিস খেতে
পারেন।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে লেখকের শেষ চূড়ান্ত ভাবনা
সবশেষে বলা যায় কিসমিস একটি প্রাকৃতিক সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাবার। এতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের নানান প্রয়োজনীয়
চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
একত্রে বিচার না করলে এর সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া কঠিন হবে। পরিমাণ মতো খেলে এটি
ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি, ত্বকের যত্ন, হৃদরোগ প্রতিরোধসহ নানা উপকারে আসে।
আবার অতিরিক্ত খেলে হতে পারে গ্যাস, দাঁতের ক্ষয়, ওজন বৃদ্ধি ও রক্তের সুগারের
পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। তাই বেক্তিগতভাবে শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কিসমিস
খাওয়া উচিত। যারা নিয়ম মেনে, সঠিক পদ্ধতিতে কিসমি খেতে জানেন, তারা সহজেই এর
সব উপকার পেতে পারেন। এই ছোট ফলটির মধ্যে রয়েছে বড় উপকার--শুধু জানতে হবে
কখন, কিভাবে ও কতটুকু খাওয়া উচিত।
এডভেঞ্চার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url